আমাদের দেশের অধিকাংশ শিশুর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা বিস্তারে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। যে কোনো শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার মূল ভিত্তি। যেটা একজন শিশুকে ভবিষ্যতের একজন যোগ্য এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি যার যত বেশি শক্তিশালী হবে তার শিক্ষাজীবন তত সাফল্যমণ্ডিত এবং গৌরবোজ্জ্বল হবে। তাই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক শিক্ষা সেজন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চার এবং পাঁচ বছর বয়সে শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুর শিক্ষার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে শিশুকে স্বাগত জানিয়ে অত্যন্ত স্নেহ-মমতায় বরণ করে নেন শিক্ষকরা।
উৎসব ও আনন্দময় পরিবেশে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে শিশুদের বরণ করার আয়োজন থাকে প্রতিবছর। ভর্তির পর সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষে নাচ-গান, খেলাধুলা, গল্পকথায় শিক্ষার মাধ্যমে চলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। নেই কোনো পড়ালেখার চাপ, নেই বইয়ের বোঝা, নেই পরীক্ষার চিন্তা। হেসেখেলে, নাচে-গানে-অভিনয়ে আসা আর যাওয়া। হাসি-আনন্দে মেতে থাকা সারাক্ষণ। সে আনন্দের মাঝেই চলে শিক্ষা। আনন্দের মাঝে যে শিক্ষা শিশু অর্জন করে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেজন্য বলা হয় আনন্দহীন শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীর এ আনন্দময় পরিবেশ অভিভাবকদের মনে অপার আনন্দের সঞ্চার করে। আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে মনেপ্রাণে। শাসনের নেই কোনো কঠিন কঠোর শৃঙ্খল, আছে স্নেহ-মমতা-সোহাগের সুশীতল ধরন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিটি শিশুকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখে পাঠদান করে থাকে, তাই তো শিশুরা পরিচিত পরিবেশের বাইরে নতুন পরিবেশে এসেও অস্বস্তিবোধ করে না। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় শিশুরা খুঁজে পায় অচেনা পরিবেশে চেনা পরিবেশের সৌরভ।
প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিটা আসলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের প্রস্তুতিপর্ব। কোনো কিছু অর্জন করার জন্য বা কোনো কিছু জানার জন্য বা করার জন্য প্রস্তুতি থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছা খুব সহজতর হয় আবার যে কোনো কিছু করার আগে প্রস্তুতি থাকলে কাজটি সুন্দরভাবে সুসম্পূর্ণ হয়, তাই প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে শিশুদের ভর্তি করিয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য মানসিকভাবে শিশুদের প্রস্তুত করা হয়। পরিচিত করা হয় বিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশের সঙ্গে, শিক্ষকদের সঙ্গে, সহপাঠীদের সঙ্গে, বইয়ের সঙ্গে যাতে শিশুদের বিদ্যালয়ভীতি দূরীভূত হয়ে আনন্দময় পরিবেশ দেখে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। শিশুরা যেহেতু কোমলমতি স্বভাবের হয়। কোমল মনে আনন্দের ছোঁয়া যখন লাগে সে আনন্দের সাধ আস্বাদন করতে বারবার শিশু ছুটে আসতে চাইবে, আগ্রহ প্রকাশ করবে। সমবয়সীদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলাধুলার যখন একটা পরিবেশ পাবে তখন বিদ্যালয় শিশুর কাছে আনন্দনিকেতনে পরিণত হবে। আনন্দের সাধ পাওয়া শিশুরা আর কখনো কোনোদিন বিদ্যালয়ে না এসে থাকবে না। শিশুর জন্য আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে শিশুরা লেখাপড়া থেকে কখনো ঝরে পড়বে না। বিদ্যালয়ের উপস্থিতিও শতভাগ থাকবে সব সময়। এখন অবশ্য প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে আনন্দময় পরিবেশে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকরা পাঠদানের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষাচক্র সমাপনে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে যেটা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে অত্যন্ত আশাপ্রদ। সরকারের এ সদিচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে শিক্ষকরা শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত করে তোলার চ্যালেঞ্জ যেন তাদের হাতে। শুধু শিক্ষাদান করা নয়, সুশিক্ষার মাধ্যমে শিশুকে নৈতিকভাবে বলীয়ান করে বিজ্ঞানমনস্ক, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনের মধ্যে বপন করে দেওয়ার কাজটি অতি যত্নে সম্পন্ন করেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। তাই শিশু শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আনন্দময় পরিবেশ। আরও প্রয়োজন শিক্ষকদের আন্তরিকতা, স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসার হাতছানির ছোঁয়া। তবেই প্রাথমিক শিক্ষা কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছবে।