শিশুকে শেখান ভালোবাসা দিয়ে

0
Parenting
সন্দেহ নেই যে প্রতিটি বাবা-মা সন্তানকে প্রাণাধিক ভালোবাসেন। কিন্তু এ ভালোবাসা যোগ হতে হবে সন্তানের সঙ্গে তাদের প্রাত্যহিক আচরণে। মনে রাখতে হবে, শিশুরা ভুল করতে পারে। কিন্তু তাকে আদর দিয়ে শেখাতে হবে। শিশুরা ভুল করে, কিন্তু অন্যায় করে না। কোনো অন্যায়-কাজ শিশুর দ্বারা হয়ে গেলেও সেটাও সে ভুল করেই করে। তাই এখানে রেগে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং তাকে বুঝিয়ে বললে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও শিশুদের সঙ্গে সদাচরণের গুরুত্ব অপরিসীম।
 
আমাদের চারপাশে দৃষ্টি রাখলেই শিশুর প্রতি আচরণের ভিন্নতা দেখা যায়। পথ চলতে গিয়ে একটি শিশু যদি হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়, তবে তার সঙ্গে থাকা মা তাকে বলে, ‘দেখে চলতে পারিস না।’ আবার শিশু কোনো কিছু ‘করিনি’ বলে স্বীকারোক্তি দিলেও তাকে সন্দেহ করা হয়। বলা হয় যে, ‘তুমিই করেছ।’ কোনো কিছু কেনার বা নেওয়ার বায়না ধরলে তাকে শুধু তিরস্কারই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে তাকে প্রহার করে থামিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অন্যের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয় ‘ওর সামনে তুমি কিছুই না’ অথবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে বা আশানুরূপ ভালো না করতে পারলে তাকে বকাঝকা করে হেনস্তা করা—এসবের চর্চা অহরহ হচ্ছে অনেক পরিবারে। এসব আচরণ মূলত শিশুর মাঝে হীনম্মন্যতাবোধ সৃষ্টি করে, যা তার পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু বাবা-মা তাঁদের সন্তানকে গালিগালাজ করেন; কিন্তু তাঁরা বোঝেন না আজ তাঁরা যে গালি তাঁদের সন্তানকে দিচ্ছেন কাল সন্তানেরা সে গালি তাঁদেরকেই ফিরিয়ে দেবে।
 
অনেক শিক্ষিত পরিবারেও আমি বাচ্চাদের সঙ্গে এরূপ আচরণ করতে দেখেছি। আমাদের বুঝতে হবে বাচ্চাদের সঙ্গে অসদাচরণ করে বা তাদের তিরস্কার করে কিছু শেখানো যায় না। শিশুরা ছোট হলেও ওদের সম্মানবোধ আছে। ওদের এই বোধকে আমাদের লালন করতে হবে। তবেই ওরা একদিন আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ও আত্মর্মযাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।
 
মনোবিজ্ঞান বলে, ‘উৎসাহ শিশুর মনোবৃত্তিকে আরো সবল করে।’ শিশু অনুপ্রেরণা বা উৎসাহ পেলে আরো আগ্রহী হয়ে ওঠে কোনো কিছু করতে বা শিখতে। শিশুকে শেখাতে হয় ভালোবাসা ও আদর দিয়ে। শিশুদের ভালোবাসুন, কোলে টেনে নিন, বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরুন। দেখবেন ওরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ভেবে দেখেছেন কি এরকম আদর-ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে লালিতপালিত একটি শিশু কতটা মানসিক স্থৈর্য নিয়ে বেড়ে উঠবে? আর এরূপ শিশুই পরিণত বয়সে পারবে দেশ ও সমাজকে ভালো কিছু দিতে। এরকম একটি অনুকূল পরিবেশে প্রতিটি শিশু বেড়ে উঠতে পারলে আমাদের দেশ, সমাজ হতে পারত সুখের আধার। শুধু নিজের সন্তানই নয়, অপরের সন্তান এমনকি রাস্তায় পড়ে থাকা পথশিশুদের প্রতিও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আজকাল পত্রিকায় দেখা যায়, গৃহকর্ত্রীর হাতে শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের সংবাদ। ভাবতে অবাক লাগে, কীভাবে একজন মানুষ যে কি না নিজের সন্তানকে অসীম মমতায় লালন করে, সে-ই তার নিজ সন্তানের বয়সি অন্য শিশুর প্রতি তুচ্ছ কারণে হয়ে ওঠে খড়্গহস্ত!
 
আমাদের মনে রাখতে হবে অধিক আদরে লালিত শিশুরা জীবনপথের কঠোর বাস্তবতা সম্পর্কে থাকে অনভিজ্ঞ। তাই আদর-ভালোবাসায় রাখতে হবে ভারসাম্য। নিজের সন্তানের পাশাপাশি সেই আদর-ভালোবাসা ভাগ করতে হবে সমাজের সব স্তরের শিশুর জন্য। আমরা চলে যাব। আজকের এই শিশুদের হাতেই থাকবে আগামীর দেশ, সমাজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *