শিশুদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার শিক্ষা

0
Kindergarten

শিশুরা স্বভাবজাতই অনুকরণপ্রিয়।

তারা অন্যকে যেটা করতে দেখে বা বলতে শোনে, খুব সহজেই সেটি আত্মস্থ করে ফেলে। তাদের মাঝেই আমরা ভবিষ্যত্ পৃথিবী দেখি। তাই শিশুদের মেধা বিকাশ ও চরিত্র গঠনের দায়িত্ব আমাদের ওপরই বর্তায়। মূলত শৈশবে পরিবার, সমাজ থেকে যে ধরনের শিক্ষা তারা পেয়ে থাকে, পরবর্তী জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটে। এজন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাহিত্যিক পরিবারের সন্তানরা সাহিত্যিক হন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানরা রাজনীতিবিদ হন, আলেম পরিবারের সন্তানরা আলেম হন। বিষয়টি মূলত নির্ভর করে তার পরিবেশ তাকে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের দিকে তাগিদ দেয়।

 

 

শিশুদের সর্বদা ইতিবাচকতার চর্চা করাতে হবে। ছোটবেলা থেকেই অন্যের দোষ-ত্রুটি খোঁজা ও গিবত করার পরিবর্তে পরষ্পরকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানবপ্রেমই আল্লাহপ্রেম। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখির প্রতিও দয়া প্রদর্শনের শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে। শিশুরা বিভিন্ন কারণে মিথ্যা বলতে পারে। তাদেরকে  রাখাল ও বাঘের গল্প এ জাতীয় উপমা ব্যবহার করে শেখাতে হবে। তবে বাবা-মা যেন মিথ্যার আশ্রয় না নেয়। শিশুরা বড়দের আচরণ ও শব্দগুলোকে সর্বদা অনুকরণ করে। প্রত্যেকটি পরিবারে কমবেশি নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। আমি ছোটবেলায় দেখেছি, মাঝেমধ্যে আমার বাবা-মা কথা-কাটাকাটি করলেও আমরা সামনে গেলেই একদম চুপ হয়ে যেতেন। এটা নিঃসন্দেহে সন্তানের জন্য অনেক বড় একটা শিক্ষা। এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিটা পরিবারে গড়ে তুলতে হবে। বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া করলে, ওরা সুযোগ পেলে অন্যের সঙ্গে এমনটা করতে পারে। অনেকেই শিশুদের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখেন। এতে শিশুর ছোট্ট মন ও শরীরে গণ্ডিবদ্ধ জীবনের লক্ষণীয় প্রভাব পড়ে। এতে তারা অকারণে ঔদ্ধত্য দেখায়। স্ট্রেস, ডিপ্রেশন ও অ্যাটেনশন ডিস-অর্ডারের শিকার হয়।

এজন্য তাদেরকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বড় করতে হবে। যারা মুক্ত পরিবেশ একদম পায় না, তাদেরকে অন্তত সকালের রোদে হাঁটাহাঁটি বা খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। সামর্থ্য থাকলে গ্রামের বাড়িতে বা সৌন্দর্য্যমণ্ডিত স্থানগুলোতে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে হবে। এতে প্রকৃতি ও পরিবেশের পাশাপাশি শিশু চিনবে তার শিকড়। ফলে তার মধ্যে বিভিন্ন ইতিবাচকতা আপনা থেকেই তৈরি হবে। প্রতিদিনের ভালো বিষয়গুলোর জন্য তাকে কৃতজ্ঞ থাকতে শেখান। শিশুকে যথাসম্ভব প্রশংসা করুন ও পর্যাপ্ত সময় দিন। তারা যেন কখনই না ভাবে যে, তার ভালো কিছু করার যোগ্যতা নেই। প্রতিটি ভালো কাজে তাকে উত্সাহিত করুন। অন্যের সন্তানকে আপনার সন্তানের সামনে বড় করে দেখাবেন না। যাতে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে যে, তারাও ভালো কিছু করতে পারে। কোনোভাবেই শিশুকে তুচ্ছ করা যাবে না। আপনি নিজেও জানেন না, তার মাঝে সৃষ্টিকর্তা কি প্রতিভা রেখে দিয়েছেন। হয়তো সে বিশ্ব জয় করতে পারে!

 

ভোগ নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ এটা শেখানো জরুরি। অন্যকে সাহায্য করা, নিজের খাবার ও খেলনা অন্য শিশুদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মানসিকতা শিখতে সহায়তা করুন। এতে তার মানসিকতার বিকাশ ঘটবে। শিশু কোনো অন্যায় করলে তাকে আলাদাভাবে ডেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এতে সে নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবং ক্ষমা চাইতে শিখবে। তাদেরকে আরো শেখাতে হবে, ক্ষমা একটি মহাত্ গুণ। শিশুকে দেখাতে হবে, বড়রা কীভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে করে সে বাস্তবতা উপলব্ধি করবে। তাদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। যাতে তারা পথভ্রষ্ট না হয়। কিছু শিশু দেখবেন অকারণে চিত্কার, চেঁচামেচি, কামড়ে দেওয়া বা অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে থাকে।

তবে তাদের সঙ্গে রেগে না  গিয়ে কোমল আচরণ করতে হবে। ফলে সে বিনয়ী হতে শিখবে। তাকে অন্যের মতামতে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তাগিদ দিতে হবে। দ্বিমত পোষণের পদ্ধতিও শেখাতে হবে। তার জানার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিতে প্রশ্ন করার প্রতি উত্সাহিত করতে হবে। শিশুর ভালো লাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ, অপছন্দ অভিব্যক্তি প্রকাশ করার মতো সুযোগ বড়দের করে দিতে হবে। তার লুকায়িত প্রতিভাগুলো আবিষ্কারের চেষ্টা করতে হবে। সে যে ইতিবাচক কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, সেটাকে বিকশিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই তাদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বই ও পরীক্ষার চাপ অনেক বেশি। এতে তাদের সুপ্ত প্রতিভা সহজে বিকাশ লাভ করে না। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

X