ভালো বাবা-মা হতে চাইলে করনীয়

0
Parenting

সন্তান কোনো কারণে যদি কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট অর্জন করতে না পারে, তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ অভিভাবকরাই হন। সন্তানের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন তারা। কিন্তু তাদের এই বিরূপ আচরণ সন্তানের মনের উপর কী প্রভাব ফেলে সে ব্যাপারে অধিকাংশ অভিভাবকরাই অসচেতন। প্রায়ই দেখা যায় সন্তানদের আমরা অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে থাকি। কে কেমন ফলাফল করলো, কে কী পারে আর আমার সন্তান কী পারে না তার তুলনা আমরা সন্তানদের সামনেই করি।

সন্তানকে কারো সঙ্গে তুলনা নয়

সন্তানদের যখন আমরা অন্যদের সঙ্গে বা তাদের সহপাঠী বা বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা করি, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায় সন্তানের মধ্যে এক ধরনের হিংসাবোধের জন্ম হয়। এই হিংসা ধীরে ধীরে তার অভ্যাসের অংশ হয়ে যায়। এবং জীবনের সব পর্যায়ে যে যখনই তার চেয়ে ভালো করবে তার সঙ্গেই বিরোধে জড়িয়ে পড়বে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সারাজীবন সেই সম্পর্কের বিরোধ থাকতে পারে। সন্তানের উপর এক ধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। যা কোনো কোনো সময় শারীরিক অসুস্থতারও কারণ হতে পারে। ফলে সন্তান তার সৃজনশীল গুণাবলী হারাতে পারে।

বাবা মায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। সন্তান তখন মনে করতে থাকে যে, তার বাবা মা তাকে ভালোবাসে না। তুলনা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই বাবা মাকে ঘৃণা করতে শুরু করে এবং বাবা মায়ের সঙ্গে নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করতে না পারায় তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। কখনো কখনো সন্তান ভুল পথেও পা বাড়ায়।

আমরা সবসময় একটি কথা বলে থাকি যে বাবা মা, সব সময় বাবা মা  ই হয়। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত বিষয় হলো, বাবা মা কেমন তা তাদের সন্তানদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। সব বাবা মায়েরাই তার সন্তানের মঙ্গল চায়। চায় তারা যেন জীবনে সব সময় ভালো থাকে, সফল হয়। তবে সন্তান বড় হতে হতে বাবা মায়েদের মনে নানা রকম শঙ্কা আশঙ্কা বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাদের সন্তান বিপথে যাচ্ছে না তো? নেশায় আসক্ত হচ্ছে না তো? সন্তানের বন্ধু বান্ধব ভালো তো? আর এই সব আশঙ্কা থেকেই নিজের অজান্তে বাবা মায়েরা সন্তানদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেন। তাই সন্তানদের বড় হওয়ার সময়টাতে অভিভাবকদের সচেতনভাবে সন্তানদের সাথে আচরণ করতে হবে। যাকে বলে “গুড প্যারেন্টিং” বা যা কিনা সন্তান লালন পালনের আদর্শ কৌশল।

সন্তানের সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন

সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসা করুন, তার ছোটখাটো সাফল্যকেও উদযাপন করুন। জীবনে ব্যর্থতাকে যেন মেনে নিতে পারে এমনভাবে তার মানসিকতা তৈরি করুন। তার কোনো ব্যর্থতাকে বিদ্রূপ বা ব্যঙ্গ করবেন না। অপছন্দের কাজ করলে একটা পর্যায় পর্যন্ত সেটির প্রতি গুরুত্ব দেবেন না। সন্তানকে কখনোই একই আদেশ বা নির্দেশ বারবার দেবেন না। তার পড়ার বই মুখস্থ করবেন না। স্কুলের বই-ব্যাগ তাকেই গোছাতে দিন। স্কুল থেকে সে যেন নিজের পড়া নিজেই তুলে নিয়ে আসে, তাতে উৎসাহ দিন। তার বই ব্যাগ গোছানো থেকে বিরত থাকুন, স্কুলের পড়া আপনি সংগ্রহ করবেন না। সন্তানের সঙ্গে বিভিন্ন খেলা খেলুন। পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে যান। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে সন্তানকে নিয়ে যান।

 সন্তানের কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। তার মতামতকে মূল্যায়ন করুন।

সন্তানকে   গুণগত সময়   দিন। যে সময়টুকুই তার সঙ্গে থাকছেন, সে সময়টুকু শুধু তাকেই দিন। সন্তানের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা মোবাইল ব্যবহার সীমিত করুন। তার সঙ্গে সময় কাটানোর সময় প্রয়োজনে আপনিও মোবাইল ফোন বা ট্যাব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার কমিয়ে দিন।

সন্তানের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন। তাকে ভালোবাসছেন কিন্তু আপনার সন্তান সেটা অনুভব করতে পারছে না বা বুঝতে পারছে না, এমনটা যেন না হয়।

সন্তানের সামনে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য বা তার শিক্ষকের সমালোচনা করবেন না। বাবা মা একে অপরকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ বা নিন্দা করবেন না, তর্কে জড়াবেন না, একে অপরকে বাজে কথা বলবেন না।

  নজরদারি করবেন নাপ্রয়োজনে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন।

তুমি কেন পারো না  , বা  তোমাকে এটা পারতেই হবে  , এ ধরনের কথা কখনো সন্তানকে বলবেন না।

তার বন্ধুদের গুরুত্ব দিন। ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে উৎসাহিত করুন। তবে পরিষ্কার ধারণা রাখুন তার বন্ধুদের সম্পর্কে।

তাকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হলে বাবা  মা নিজেরা মিথ্যা বলবেন না, আইন ও নিয়ম ভাঙবেন না (যেমন: সে বুঝতে পারে এমন কোনো মিথ্যা তার সামনে না বলা, লাইন ভেঙে লিফটের সামনে না যাওয়া)।

অন্য কারো সঙ্গে সন্তানের তুলনা করবেন না, তাকে অহেতুক সন্দেহ করবেন না, সন্তানের গায়ে হাত তুলবেন না।

সন্তানকে নিজের হাতে খেতে উৎসাহিত করুন। সে কম খায় এই অজুহাতে তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেবেন না।

 বয়স অনুযায়ী তার শারীরিক পরিবর্তন আর নিরাপত্তা নিয়ে ধারণা দিন।

আপনার সন্তান আপনার সারা জীবনের স্বপ্ন এবং আরাধনার প্রাপ্তি। তার সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিজের আচরণে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন। সন্তানের আচরণে যদি কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন তবে মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। গুড প্যারেন্টিংয়ের জন্য সন্তান জন্মের পরপরই মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সময় পাল্টাচ্ছে, পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। তাই আপনি আমি কেমন করে বড় হয়েছি সেই ভাবে, সেই বিবেচনায় আপনার সন্তানকে বড় করবেন এই ভাবনা করাটাই বোকামি। একটু সচেতন আর আর কৌশলী হলে আপনিও আপনার সন্তানের কাছে হয়ে উঠবেন একজন আদর্শ বাবা মা।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *