আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ আর নারী। এভাবে সৃষ্টি করা তার প্রগাঢ় হিকমার নিদর্শন। তিনি কাউকে কন্যাসন্তান দান করেন, আবার কাউকে পুত্রসন্তান।আবার কাউকে উভয়টিই দান করেন। কাউকে আবার কোন সন্তানই দেন না।
এটি পুরোটাই মহান স্রষ্টার ইচ্ছাধীন। কন্যা সন্তান এবং পুত্র সন্তান উভয়ই আল্লাহর দান।
দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজের পরিলক্ষিত হয় যে,যখন পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে তখন খুব আনন্দ প্রকাশ করে উৎসাহের সঙ্গে মিষ্টি বিতরণ করে পুত্র সন্তান হওয়ার সংবাদ প্রচার করা হয়। তার লালন-পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ আন্তরিকতা প্রকাশ পায়।
পক্ষান্তরে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণে কোন খুশি প্রকাশ করেনা। কারো সঙ্গে কন্যাসন্তান হওয়ার আলোচনাটুকু করতেও লজ্জাবোধ করেন অনেকেই। অনেক সময় কন্যাসন্তান হওয়ায় স্ত্রীর উপর স্বামী এবং তার পরিবারের সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিরূপ আচরণ করেন।
এমনকি অলক্ষী বলে হেয় করে বেচারী কন্যা-জননীকে অপমানিত করেন অনেকে। অথচ এটা মহিলার ইচ্ছাধীন কোনো বিষয় নয়। বরং এসব আল্লাহরই ইচ্ছাধীন।
এদিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন: আসমান ও জমিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন…।( সুরা শুরা, আয়াত-৪৯)
কোরআনের শিক্ষার এ বোধটুকু একজন মুসলমানের বিবেকে থাকা উচিত। কোন মুসলমানের জন্য এধরনের কাজ সম্পূর্ণ নাজায়েজ এবং গুনাহের কাজ। এমনকি আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি জ্ঞানের উপর আপত্তি করার নামান্তর। এটা জাহিলি যুগের কাফিরদের কর্মপন্থা।
প্রাক ইসলামী যুগে আরবে কন্যা জন্মলাভ হওয়াকে নিজের জন্য অপমানের বিষয় মনে করা হতো। ইসলাম এ কুপ্রথার অবসান ঘটিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়া’লা বলেন: তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের ‘সুসংবাদ’ দেয়া হয় তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।
(সূরা নাহল, আয়াত-৫৮,৫৯)।
কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের নিদর্শন
কন্যাসন্তান মহান আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে মাতা-পিতার জন্য একটি বিশেষ নেয়ামত। কন্যাসন্তানকে অশুভ মনে করা কাফেরদের বদ স্বভাব।কন্যাসন্তানকে অপছন্দ করা খাঁটি মুমিনের পরিচয় নয়। কন্যাসন্তান অশুভ বা অকল্যাণকর নয়, বরং কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়া সৌভাগ্যের নিদর্শন।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওই স্ত্রী স্বামীর জন্য অধিক বরকতময় যার দেনমোহরের পরিমাণ কম হয় এবং যার প্রথম সন্তান হয় মেয়ে। তাই কোন মুসলমানের এই প্রথার সঙ্গে কোনরূপ সামঞ্জস্য থাকা উচিত নয়।
কন্যাসন্তানে কোনরূপ অসন্তোষ প্রকাশ পরিহার করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যেমন কন্যাসন্তানকে আল্লাহর রহমত বলেছেন এবং কন্যাসন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন এটা আমাদের আদর্শ ।তার অনুসরণ আমাদের কর্তব্য।
ইসলামের শিক্ষা হলো, কন্যাসন্তান জন্ম নিলে আনন্দ প্রকাশ করা। কেননা কন্যা জন্মের সংবাদকে পবিত্র কোরআনে ‘সুসংবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর সুসংবাদ শুনে মানুষ আনন্দ প্রকাশ করে এটাই স্বাভাবিক।
তাছাড়া কন্যাসন্তান জন্মানোয় নিজেকে ছোট, অপমানিত মনে করা কাফেরদের কর্মপন্থা। তাই মুসলমানদের উচিত,অধিক আনন্দ প্রকাশের মাধ্যমে কাফেরদের এ নিকৃষ্ট রীতির বিলুপ্তি ঘটানো।
Previous Story
সন্তানের সুরক্ষায় বাবা মায়ের দোয়া
Next Story